মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
দিনার, নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম মৃত্যু বরণ করেছেন । আজ মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া এলাকায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সখিনা বেগমের ভাগনী ফাইরুন্নেছা আক্তার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। বীরাঙ্গনা সখিনা বেগমের পিতার নাম মৃতঃ সোনাফর মিয়া এবং মাতার নাম মৃতঃ দুঃখী বিবি।
তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেলে আসরের নামাজ শেষে নিকলী উপজেলার গুরুই মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে গুরুই এলাকার কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
এলাকাবাসী এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামের সখিনা বেগম ছিলেন অন্যতম। ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে অংশ নিয়ে তিনি একাই রামদা দিয়ে কুপিয়ে পাঁচজন রাজাকারকে হত্যা করেছিলেন বলে জানা গেছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন সখিনা বেগম। ১৯ অক্টোবর নিকলী উপজেলাকে পাকহানাদার ও রাজাকারমুক্ত করার অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে তার বোনের ছেলে মতিউর রহমান পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ হন।
অক্টোবরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা বড় ধরনের আক্রমণ চালালে বহু পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়। ওই অভিযানে সখিনা বেগম একাই রামদা দিয়ে পাঁচজন রাজাকারকে হত্যা করেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা। তার ব্যবহৃত রামদাটি বর্তমানে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে এবং নামফলকে বীরাঙ্গনা সখিনা বেগমের নাম উল্লেখ আছে।
নারী হয়েও যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা দেখানোয় ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকার তাকে ৫০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেন। নিঃসন্তান সখিনা বেগম স্বামী-হারা অবস্থায় বরমাইপাড়া এলাকায় খালার বাড়িতে আশ্রিত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
নিকলী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইদ্রিছ আলী ‘জনপদ সংবাদ’ কে বলেন, সখিনা বেগম ছিলেন এক দুঃসাহসিক নারী মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের পরও স্থানীয় অনেক রাজাকার তার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলো। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩